ফেসবুক মিডিয়ায় থাকছেনা স্বাধীন মত শেয়ার করা
সামাজিক অপপ্রচার, গুজব রটানো, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, সামাজিক নানা অপরাধমূলক কাজে জড়াবে না বলে জানিয়েছেন ফেসবুকের এশিয়ার কন্টিনেন্ট বিশেষজ্ঞ বরুণ রেড্ডি।
আমরা দেখে আসছি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে অনেক প্রকার গুগল গুজব ছড়িয়ে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন আমাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এ মাধ্যমে বর্তমানে আমরা নিজেদের ভাবের আদান প্রদান সহ এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই যোগাযোগ মাধ্যমে অতি সহজে আমরা আমাদের যেকোনো পার্থকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে পারি। এটা একটি কার্যকরী মাধ্যম বলা যেতে পারে। এ মাধ্যমে সামাজিক এবং রাজনৈতিক অনেক যোগাযোগ এবং সংস্কার করা যায়। এক কথা বলতে গেলে বিশ্বকে হাতের মুঠোয় আনার জন্য ফেসবুক সবচেয়ে বেশি কার্যকরী মাধ্যম।
কিন্তু এ কার্যকরী মাধ্যম কি অসৎ পথে ব্যবহার করে সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর দিকে বয়ে আনছে। ফেসবুক মাধ্যমে যেকোনো দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করা ওই থাকে। এমনকি মাঝে মাঝে মিথ্যা গুজব এর মাধ্যমে সামাজিক ডাঙ্গা সহ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফলে ফেসবুকে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তাই গত বেশ কয়েক বছর ধরে ফেসবুকে নিয়ন্ত্রণের কথা বারবার ইউরোপে বলা হলেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সে ব্যাপারে একমত পোষণ করেনি। ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় রাজনৈতিক অরাজকতা।
তবে বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের সামাজিক প্রচারে নিষেধাজ্ঞা করার কারণ সময়ের মধ্যে অন্যতম কারণ হলো। পৃথিবীর কোন প্রান্তে যখন কোন দল অথবা গোষ্ঠী, এমনকি কোন রাস্ট্রপতির যদি জনগণ নিগৃহীত হতে থাকত, তখন তার ফেসবুক মাধ্যমে সারা বিশ্বের কাছে ছড়িয়ে পড়তো। এক্ষেত্রে বিশ্বমোড়লরা শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিষ্ঠিত মিডিয়াগুলোর মুখ বন্ধ রাখতো। প্রতিষ্ঠিত মিডিয়াগুলো মধ্যে অন্যতম আলজাজিরা ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ফলে তারা আল-জাজিরা চ্যানেল কি কিনে ছিল আমেরিকানরা। কিন্তু ফেসবুক পোস্টকার্ডের সাধারণ জনগণ থাকায় কোনভাবে তাদেরকে রোধ করা যাচ্ছিল না। আইন এবং কঠোর নীতি অবলম্বন করে কোনভাবে তাকে রোধ করা যাচ্ছিল না।
2013 থেকে 2017 সাল পর্যন্ত ইসরাইলি বাহিনী জেরুজালেম অমানবিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ব্যাপক প্রতারণা হতে থাকে । অন্যদিকে এশিয়াতে রাখাইন অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের চরম নির্যাতনের সময় যখন জাতিসংঘের হাইকমিশন নীরব ছিলেন, সমস্ত মিডিয়া যখন নীরব ছিল, তখন এই ফেইসবুক রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের চিত্র কি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছিল। এছাড়াও ভারতের গরু বা বাহিনী যখন গরুর গোশত বহন করার অপরাধে মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল বিশ্বমিডিয়া যখন নীরব ছিল তখনও সর্বাগ্রে ফেসবুক ভিকটিমকে বিশ্বব্যাপী আলোচিত করে তুলেছিল। কাশ্মীর শুধু মুসলিমদের চরম দুর্দশার কথা ফেসবুক মাধ্যমে প্রচার হতে শুরু হয়। যখন বিশ্ব নেতারা তাদের এই নির্যাতনের চিত্র কে কোন ভাবে গোপন রাখতে পারছিল না তখন তারা একে গুজব প্রচার এর নাম বলে পেজ ফেসবুকের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।
2017 সালে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সাথে ইন্টারন্যাশনাল ল' ম্যাকারদের সাথে এক বৈঠকে আলোচনা হয় সেখানে ফেসবুকের উপর চাপ করা হয় যে, ভিক্টিমের ঘটনাগুলো যারা প্রচার না করে। তখন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছিল আমরা যাচাই বাছাই করছি তবে সকল ক্ষেত্রে আমরা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ব্যক্তি নিজের পোস্টকারী। আমরা তার প্রচারণাকে ইচ্ছে করে বন্ধ করে দিতে পারি না। তাকে বিপদে ফেলে দিতে পারে না। যদি আমরা একই পরিপূর্ণ নিষেধ করি তাহলে সত্য খবর তো আর আসতে পারবে না। সনি ফেসবুকের সেরা তারকাদের এ আলোচনা সফল হতে পারেনি। আন্তর্জাতিক আইন প্রণেতাদের অনুরোধে এরপর থেকে রক্তপাতের ঘটনা দেখলে তাকে ডেকে দেওয়া হতো। এখনো এমনটি হয়।
আমরা গত কয়েকদিন আগেই অনলাইন পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি ফেসবুকের সাথে ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বৈঠক হয়েছে। এবং তার আগে আমরা দেখতে পাই ভারতের নরেন্দ্র মোদি আমেরিকা সফর করেছেন। তাদের মাঝে কি আলোচনা হয়েছে জানিনা তবে তাদের আলোচনায় একটা বিষয়ে ধরা সম্মত হয়েছে যে তাদের দুই দেশ মুসলিম সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এ কাজ করবে। এখন প্রশ্ন হলো সারা পৃথিবীতে শুধু কেবল মুসলিমদের সন্ত্রাসী। যদি তা না হয় তবে কেন শুধু মুসলিম সন্ত্রাসের কথা বলা হয়েছে। নাকি তারা যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাবে তার বিরুদ্ধে যে কথা বলবে তাকে এই সন্ত্রাসের ট্যাগ লাগিয়ে দিয়ে তার বিরুদ্ধে দুই দেশ ঐক্য হয়ে ভিকটিম এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে? এ বিষয়টা একটু ভেবে দেখা দরকার।
নরেন্দ্র মোদি ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বৈঠকে পরপরই আজকে ঢাকায় আসেন ফেসবুকের এশিয়ান কনটেন্ট বিশেষজ্ঞ বরুণ রেড্ডি। তিনি সাংবাদিকদের জানান ফেসবুক যাবতীয় অপকর্মের সহযোগী হবে না। অর্থাৎ সব অপপ্রচার, নৈরাজ্যবাদ, জাতিগত বিদ্বেষ, এছাড়াও সামাজিক যত রকমের অপকর্ম আছে কোন কিছুরই ফেসবুক সহযোগী হবে না। এছাড়াও তিনি আরো জানান, ফেসবুকের নিজস্ব আইন অনুযায়ী কারো কাছে তথ্য আদান প্রদানের নিয়ম নেই। তবে সরকার চাইলে ফেসবুক আইন অনুযায়ী সরকারের সাথে তথ্য আদান প্রদান করবেন। তাছাড়াও কোন বিষয় যদি রিপোর্ট করা হয় তাকে ফেসবুক থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। বাংলাদেশে এখনও ফেসবুকের কোন অফিস খোলা চিন্তা ধারা নেই কর্তৃপক্ষের।
অবশ্যই আমি একে স্বাগত জানাই। কেননা আমি নিজেও ফেসবুকে অনেক অকারণ দেখেছি যা রোধ করার জন্য আমিও পীরিত হই। আমিও চাই ফেসবুকে মাধ্যমে অপরাধ বন্ধু হয়ে যাক।
এখন আমার প্রশ্ন হল 2013 থেকে 2017 পর্যন্ত এ সময়ে বাংলাদেশ সরকার ফেসবুকের কাছে তথ্য চেয়েছিল অপরাধীদের। বার বার অনুরোধের পরেও ফেসবুক নাকাশ করেছিল বারবার। এখন কি এমন হল, ফেজবুক কর্তৃপক্ষ নিজেই বাংলাদেশে এসে সাংবাদিকদেরকে বলছে, সামাজিক গুজব ও অপরাধ এবং নৈরাজ্যবাদ কি তারা সাপোর্ট করবে না। নাকি এই কথার অন্তরালে বিশ্বের নির্যাতিত মানুষদের আর্তনাদ বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছাবে না বলে দাবি করেছে। আমার তো ভয় হয় সেই দিকটাই। যখন নাফ নদীর ওপারে মানুষগুলোকে হত্যা করি মৃত মাংস মানুষের গোশত খেয়ে হিংস্রতার পরিচয় দিয়েছিল মগ জাতিরা। তখন ফেসবুকের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি প্রথমে। আজও কাশ্মীরে কি হচ্ছে, তা আমাদের জানার কোন ব্যবস্থা নেই কারণ সেখানে ইন্টারনেট বন্ধ।
তারপর আসে রিপোর্ট ব্যবস্থা, রিপোর্টিং সিস্টেম টা কেমন সে বিষয়টা তিনি খোলা করেননি। যদি এমন হয় যে কারোরই ফুটে কনটেন্ট ডিলিট করে দেওয়া হয় তাহলে ভিকটিমের জন্য আর কোন ডকুমেন্ট বলে কিছুই থাকবে না। আমি মনে করি রিপোর্ট এর ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা দেখা অবশ্যই দরকার।
অতি সাম্প্রতিককালে ইউটিউব এর মাঝে একই প্রবণতা লক্ষ্য করেছি, আগে এক সময় ইউটিউব ছিল নিরাপদ এবং উন্মুক্ত। সেখানে ভিকটিমের এই তথ্যগুলো বেশি প্রকাশিত হতো এবং এখনো হয়। তবে কিছুদিন ধরে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ম নীতির কিছু পরিবর্তন করেছে। তার মাঝে অন্যতম হলো, সামাজিক কোনো উত্তর চলচ্চিত্র ইউটিউব এখন এলাও করতে চাইনা এমনকি কিছু কিছু ভিডিও ইউটিউব আপলোড এর পরে ডিলিট করে দেয়। তারা নোটিশ করে যে নিরাপত্তাজনিত কারণে ভিডিওটি ডিলিট করা হলো। এরপর আছে রিপোর্ট সিস্টেম রিপোর্টের মাধ্যমে একটি চ্যানেল কে পর্যন্ত চিরতরে বন্ধ করে দেয়া যায়। অতি সাম্প্রতিককালে তাবরেজ আনসারী হত্যা সম্পর্কে আমি একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করার পর ইউটিউব কর্তৃপক্ষ তা'আলা ও করনি এবং আমাকে নোটিশ করেছিল, এটা নাকি জাতিগত বিদ্বেষ। অথচ তাবরেজ আনসারী আরো বহু জান কি শুধুমাত্র জাতিগত বিদ্বেষের কারণে হত্যা করা হয়েছিল। এছাড়াও গতকালকে একটি ভিডিও আমার সামনে এসে হাজির হয়, এক ভারতীয় বিজেপির সমার্থক হিন্দুত্ববাদী, ভারতীয় মুসলিমদের কে হত্যার হুমকি দিয়েছিল তার জবাব দেওয়া হয়েছে। অথচ ইউটিউব কর্তৃপক্ষ আমাকে জিজ্ঞেস করছে এটা কি আপনি ভায়োলেন্ট মনে করছেন? এই দুটো ঘটনা থেকে আমরা কি জানতে পারি? অথবা আমাদের কি মেসেজ দেয়। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে সত্য ঘটনা আমরা কি করে প্রচার করব আমাদের চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা? তাই আমরা ধরে নিতে পারি যে ইউটিউবে বিক্রি হয়ে গেছে তাদের কাছে যারা বিশ্বব্যাপী মুসলিম হত্যার মিছিলে নেমেছে।
যাই হোক আমরা পুরা বিষয়টা কি বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে, বর্তমানে যেসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রয়েছি, তা হয়তো অচিরেই আর মুসলিমদের কথা বলবেনা। বিশেষ করে মুসলিম নির্যাতনের বার্তা বিশ্বের কারক আমি আর পৌঁছবে না। যদি কারো কানে এবার তা না পৌঁছায় তাহলে কেউ আর এগিয়ে আসবে না। তাহলে সারা পৃথিবীর নির্যাতিতদের আর্তনাদ আকাশ-বাতাস ভারী হবে। শোনার মতো কেউ থাকবে না।
যমুনা টিভির প্রতিবেদনটি দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন!প্রতিবেদনটি দেখতে এই লিংকে যান
কোন মন্তব্য নেই